নির্জন By রিয়াজ ফাহমী

REVIEW ã TEXASBEERGUIDE.COM × রিয়াজ ফাহমী

নিভৃতে সিরিজ এর দ্বিতীয় মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলার ‘নির্জন’।

বইয়ের কথা:

নি:সঙ্গ প্রফেসর আবীর চৌধুরী এক রহস্যময় চিঠি পান।
স্যার,

এক বৃষ্টির দিনে আপনার ক্লাস ছিল।একটা ছোট গল্প বলেছিলেন।

গল্পে একটা মেয়ে প্রতিরাতেই একটা বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনে। তীব্র সেই কান্নার আওয়াজ। প্রথমে একটা বাচ্চার কান্না শোনা যায়। এরপর দুটো।তারপর তিনটা। একসময় অসংখ্য বাচ্চার কান্নার আওয়াজে মেয়েটার বদ্ধ উম্মাদের মতো অবস্থা হয়।

স্যার গল্পটা কি এখন আপনার মনে পড়েছে? ঘন্টা পড়ে যাওয়াতে আপনি আর গল্পটা শেষ করতে পারেননি। আমি সেই গল্পের বাকি অংশ শুনতে চাই।

ইতি
হেনা।

আবীর এক নিঃশ্বাসে চিঠিটা পড়লেন। মেয়েটার জন্য অদ্ভুত এক কষ্ট বোধ করতে আগলেন। জীবনে প্রতারিত হয়েও নিজের জন্য কোনো দুঃখ নেই। সব দুঃখ পৃথিবীর আলো না দেখা এক শিশুর জন্য।এই দুঃখ মাতৃত্বের দুঃখ। মাতৃত্বের সুখের চেয়ে মাতৃত্বের দুঃখ হয় প্রবল। খুবই প্রবল।

এতটুকু পড়ে আবীর চৌধুরী সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। সেই ধারণা পাল্টে দিতেই যেন হঠাৎ উদয় হয় নিভৃতে। একের পর এক অবিশ্বাস্য সত্য বেরিয়ে আসে সকলের সামনে! নির্জন

'নিভৃতে' বইয়ের পর একই সিরিজের দ্বিতীয় বই 'নির্জন' প্রকাশিত হয়েছে। নিভৃতে বই দিয়ে আলোচনায় আসা লেখক রিয়াজ ফাহমী জানিয়েছেন 'নিভৃতে' সিরিজের আরও বই আসবে সামনে। আপাতত দ্বিতীয় বই 'নির্জন' নিয়ে একটু কথা বলে আসি..

'নিভৃতে' বই পড়ার মাধ্যমেই লেখক রিয়াজ ফাহমীর সাথে পরিচয়, ভালো লেখা সত্ত্বেও প্রচার করতে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না লেখক রিয়াজ ফাহমী। খুব সরল ভাষায় ছোট ছোট বাক্য দিয়ে এমনসব ঘটনার পসরা সাজিয়ে বসেন তিনি উপন্যাসের মধ্যে -- একজন পাঠক খুবই স্বাচ্ছন্দ্যে এক বসায় উপন্যাস শেষ করে ফেলতে পারেন। ভালো লেখেন বিধায় এর আগেও রিয়াজ ফাহমীর প্রকাশিত 'নিভৃতে' এবং 'বাবা' বইটি নিয়ে আমি কথা বলেছি। মজার ব্যাপার হলো ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তিনি 'নির্জন' বইটিও যথাসম্ভব ভালো লিখেছেন এবং চমৎকার এক প্লট সামনে নিয়ে এসেছেন।

চন্দ্রভুক প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে নিভৃতে সিরিজের নিভৃতে ও নির্জন বইটি। ৮৬ পৃষ্ঠার এই 'নির্জন' উপন্যাসের ভালোলাগার বিষয়গুলোর মধ্যে একটা হলো -- প্রচ্ছদ। নিভৃতে ও নির্জন - দুটি বইয়েরই প্রচ্ছদ করেছেন স্বয়ং লেখক রিয়াজ ফাহমী। লেখার সাথে সাথে প্রচ্ছদের জন্যেও লেখক সাহেবের সমান প্রশংসা করতেই হয়।

আব্দুস সোবহান কলেজের জীববিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক আবীর চৌধুরী, যাকে ঘিরেই উপন্যাসের শুরু। অজানা ঠিকানা থেকে এক চিঠি এসেছে, সন্দেহ চোখে নিয়ে চিঠির দিকে তাকিয়ে আছেন আবীর চৌধুরী। ভাবছেন -- তারই ক���নো ছাত্রী হয়তো দুষ্টুমি করে চিঠিটি তাকে দিয়েছেন। চিঠিটি ড্রয়ারে বন্দী করে এক ব্রিটিশ লেখকের লেখা তিমি মাছের উপর একটি বই বের করলেন ড্রয়ার থেকে। আপাতত চিঠি থেকে মনোযোগ সরিয়ে 'দ্যা হোয়েল' বইয়ে তিমির ভেতর ডুবে যাওয়া যাক। কিন্তু মনের ভেতর উশখুশ করতে থাকায় খুব বেশি আর ধৈর্য ধরা সম্ভব হয়নি। আবীর চৌধুরী তিমির বইটি রেখে চিঠি বের করলেন। চিঠি পড়লেন। এই চিঠির রহস্যের জট খুলতেই উপন্যাসের ঘটনা প্রবাহিত হওয়া শুরু হয়...

উপন্যাসের শুরু থেকেই লেখক একটা মজার চরিত্রের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিবে। আখতার সাহেব। কিন্তু তার চাইতেও মজার ব্যাপার হলো এই আখতার সাহেবই উপন্যাসের শেষে গিয়ে সমস্যার সমাধান বের করতে সহায়তা করবেন। ইন্টারেস্টিং ঠেকছে? হ্যাঁ, এই উপন্যাসটায় একটু থ্রিলার থ্রিলার ভাব আছে। হয়তো নেই।

উপন্যাস যত গড়ায়, আবীর সাহেব চিঠি পেতে থাকেন। কিন্তু এই চিঠির জবাব তিনি কীভাবে দিবেন? রহস্য! রহস্য!

সব মিলিয়ে দারুণ এক উপন্যাস। উপন্যাসের শেষে গিয়ে এত সুন্দর করে ঘটনাগুলো মোড় নিয়েছে -- মিরপুরের রাস্তায়ও এত সুন্দর মোড় নেই। যাইহোক - সামান্য পাঠক হিসেবে এইটুকুই বলব -- রিয়াজ ফাহমী সাহেবের বর্ণনাভঙ্গি সুন্দর, গোছানো। ধীরে ধীরে আরও সুন্দর উপন্যাস তার কাছে আশা রাখতেই পারি আমরা। 'নিভৃতে' সিরিজের ৩য় বইয়ের অপেক্ষায় থাকলাম।

আর হ্যাঁ, রিয়াজ ভাইয়া নিজে থেকে বই নিয়ে কথা বলতে একটু সংকোচ বোধ করেন। তাই পাঠকদের বলবো -- যারা রিয়াজ ফাহমী ভাইয়ার বই পড়েছেন কিংবা পড়বেন, তাদের যদি লেখকের লেখা ভালো লাগে তাহলে বইয়ের কথা ছড়িয়ে দেবার অনুরোধ রইলো আর যদি লেখা ভালো না লাগে সেটিও গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে লেখকের নিকট তুলে ধরার আহ্বান জানাচ্ছি।

নিভৃতে, নির্জন - এরপর কোনটা?

পৃথিবী বইয়ের হোক। নির্জন একরকম আশা নিয়ে পড়তে পড়তে শেষে গিয়ে এভাবে মোড় নিবে বুঝতে পারিন। ভালো লেগেছে। নির্জন

নির্জন